• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

কর্মসংস্থান

কালীগঞ্জে বিলেতি ধনেপাতার চাষে জীবিকা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কালীগঞ্জ (গাজীপুর)প্রতিনিধি:

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর রাথুরা গ্রামের সিংহ ভাগ মানুষ গত দেড় যুগ ধরে বিলেতি ধনে পাতা চাষ করছে। এই ধনে পাতাই এখন তাঁদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। একদিকে তারা যেমন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষীদের চাষ করা বিলেতি ধনে পাতায় কর্মসংস্থানও হচ্ছে স্থানীয় অনেক মানুষের। পাশাপাশি এ উপজেলার উৎপাদিত পাতা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নারীপুরুষ দল বেঁধে জমি থেকে ধনে পাতা তুলছে। একজন আরেক জনকে হাতে তুলে দিচ্ছে পাতা। কেউ কেউ ফসলী জমি থেকে পাতা তুলে আনছে। গাছের নিচে বসে কয়েকজন পাতা থেকে ময়লা ছাড়াচ্ছে। কলা গাছের খোলসের অংশ দিয়ে বানানো রশি দিয়ে তা মুষ্টি করে আটি বাঁধার কাজ করছে নারী পুরুষ দল বেঁধে। পাতার আঁটি বাঁশের খাঁচা ভরে রাখছে। কেউ কেউ বাড়ীর আঙিনায় দাঁড়ি পাল্লায় তা ওজন করছে। কেউ আবার মাথায় কাপড় বেঁধে পাতার খাঁচা মাথায় নিয়ে ছুটছে বাজারে। তবে এ কাজে বেশি ভূমিকা রাখছেন নারী শ্রমিকরা।

কথা রাথুরা গ্রামের কয়েক জন নারী শ্রমিকের সাথে। তারা জানান, এক সময় তাদের সংসারে অনেক অভাব-অনটন ছিল। এখন তারা এই ধনেপাতার ক্ষেতে কাজ করে সংসার স্বচ্ছলতা এনেছেন এবং তা দিয়েই তারা সংসার চালাচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নারী শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রতি এক কেজি বেছে দিলে ৩টাকা পাওয়া যায়। এতে তাদের সারাদিন প্রায় ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকার কাজ হয়।

মোক্তারপুর ইউনিয়নের নামারাথুরা গ্রামের ষাটোর্ধ চাষী ধীরেন্দ্র মন্ডল বলেন, আমি১০ শতাংশ জমিতে বিলেতি ধনে চাষ করেছি। ১ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার পাতা বিক্রি করেছি। জমিতে ধনেপাতার ভাল চাষ হওয়ায় কম খরচে বেশি লাভবান হয়েছি। জমিতে পাতা হলে পাতা উঠাই। আটি বাইন্দা বিক্রি করি। এলাকার হাটবাজারে কম চলে। ঢাকায় বেশি বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে লোকজন আইসা বইসা থাকে। পাতার চাহিদা আছে।

রাথুরা গ্রামের হরিদাস বলেন, গ্রামের শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ধনে পাতা চাষ করছে। একেক পরিবারের চার পাঁচ জন করে কাজ করছে। এতে অনেক মানুষের কর্মসস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে ২০০৭ সাল থেকে ধনেপাতার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। প্রথম প্রথম অন্যত্র থেকে পাতার বীজ সংগ্রহ করে এই এলাকায় চাষাবাদ হতো। এখন অনেকেই বীজ তৈরী করতে পারেন। দূর থেকে কাউকে বীজ  কিনে আনতে হয় না। মুষ্টি ও কেজি হিসেবে এ পাতা বাজারে বিক্রি হয়।

ধনেপাতার ক্রেতা পাইকার শাহআলম বাশার বলেন, আমি ধনেপাতা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিভিন্ন আড়ৎ ও হোটেলে চড়া দামে বিক্রি করি।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কালীগঞ্জে বিলেতি ধনেপাতার চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছরে দুই, চার, পাঁচ বিঘা জমিতে বিলেতি চাষ হলেও, এখন তা প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। এ উপজেলাটি ঢাকার খুব লাগোয়া হওয়ায় কৃষকরা সরাসরি মার্কেটিং করে অনেক বেশি লাভবান হন। বিঘা প্রতি দুইলাখ টাকা খরচ হলে, তা প্রায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, বিলেতি ধনেপাতা লাভজনক ফসল। আসলে এটি নিজেই একটি মেডিসেনাল প্লেন হিসেবে ব্যহৃত হয় এজন্য এতে রোগ বালাই  কম হয়। এ জন্য কৃষক যদি একবার সুন্দরভাবে প্রচুর পরিমানে জৈব সার বা অন্যান্য সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করে এই ফসলটা করে, তখন দেখা যায় যে রোগ বা পোকা-মাকরের আক্রমন হয়না বলে সেখানে লেবার বা স্প্রে করার জন্য বাড়তি খরচ হয় না। আর এটা যারা চাষাবাদ করে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শতস্ফুতভাবে আটি তৈরি করছেন। তাছাড়া যেসব এলাকায় এই বিলেতি ধনে চাষ হয়, ওই সব এলাকায় পুরো জুড়ে সুন্দরএ কটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কালীগঞ্জের বিলেতি ধনেপাতা বিদেশে ও রপ্তানি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads